স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা মূলত: একটি অপরটির সাথে সম্পৃক্ত। আমরা যখন কোনো তথ্য বা সেবা সম্পর্কে জানতে চাই তা অবমুক্ত রাখাটা যেমন স্বচ্ছতার পর্যায়ে পড়ে, ঠিক সেই সেবা গ্রহণের প্রতিটি ধাপে আমাকে জানানোর দায়িত্ব হলো সেই প্রতিষ্ঠান বা সেবা প্রদানকারী সংস্থার জবাবদিহিতার অন্তর্ভুক্ত। প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা মানে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ডিজিটাল মাধ্যমে এই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায় সবচেয়ে কার্যকরভাবে, কেননা এখন প্রতিটি নাগরিকই কম-বেশি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে অভ্যস্ত। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট বা পোর্টালে তাদের সেবা সম্পর্কিত সকল তথ্য উন্মুক্ত রাখা আছে। কোথায়, কার কাছ থেকে, কী প্রক্রিয়ায়, কতদিনের মধ্যে একটি সেবা পাওয়া যাবে তা খুব সহজে বোঝা যায়। এভাবে তথ্য উন্মুক্ত রাখার পদ্ধতিকে সিটিজেন চার্টার বলে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত কীভাবে করতে হবে তার জন্য সরকারি নীতিমালা রয়েছে। সকল সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে 'তথ্য অধিকার আইন ২০০৯' প্রণীত হয়।
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ২০ নং আইন) |
[এপ্রিল ৬, ২০০৯] |
যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা, বিবেক ও বাক স্বাধীনতা নাগরিকগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত এবং তথ্য প্রাপ্তির অধিকার চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ; এবং; যেহেতু জনগণ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক ও জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক; এবং; যেহেতু জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা হইলে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাইবে, দুর্নীতি হ্রাস পাইবে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হইবে; এবং যেহেতু সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়: |
এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে তথ্যে জনগণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব, যা সকল কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ও দেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করবে। এই আইনের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল তথ্য নাগরিকের জন্য অবমুক্তকরণে ডিজিটাল মাধ্যম কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। আগের সেশনগুলোতে আমরা দেখতে পেলাম যে নাগরিক সেবা পাওয়ার জন্য কোথায়, কার কাছে, কী তথ্য বা কাগজপত্র নিয়ে গেলে কত টাকা সার্ভিস চার্জের মাধ্যমে সেবা পাওয়া যাবে... এসব কিছু ডিজিটাল মাধ্যমে জানানো হচ্ছে। এত স্বচ্ছতার সাথে যে কোনো নাগরিক সেবা পাচ্ছেন সেটা সম্ভব হচ্ছে শুধুমাত্র সকল ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের জন্য। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর দ্বিতীয় অধ্যায়ে তথ্য অধিকার, তথ্য সংরক্ষণ, তথ্য প্রকাশ, তথ্য প্রদান পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়াদি বলা আছে। তবে এ আইনে এটাও বলা আছে যে আমরা সব তথ্যই আবার প্রকাশ করতে পারব না। কোনো গোপনীয় তথ্য, দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে, কারো বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে, কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হতে পারে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বা প্রকাশের আগেই পরীক্ষায় প্রদত্ত নম্বর ইত্যাদি তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে প্রত্যেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে তথ্য অবমুক্তকরণ নীতিমালা-২০১৫ অনুযায়ী সকল নাগরিকের জন্য তথ্য পাওয়া সহজ করতে হবে। এজন্য সকল প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদান তথ্য ও সেবা প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। |
তথ্য ছক-৩.৩: তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯
নিচের ছকে তথ্য অধিকার আইন অনুসারে আমরা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে কী করতে পারি আর কী পারি না তার কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করি-
কী করতে পারি | কী পারি না |
|
|
ছক-৩.৪: তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী করনীয়
এবার আমরা নিজেদের এলাকার স্থানীয় সরকারি সংস্থার একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখে আসব যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সেই ওয়েবসাইটে কী কী তথ্য ও সেবা প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে।
যার যার এলাকার স্থানীয় সংস্থার ওয়েবসাইটের প্রথম পেইজ, অন্যান্য লিংক ও যে কোনো একটি সেবা গ্রহণের পেইজে গিয়ে দেখব যে, কোন কোন ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে যে কোনো নাগরিক সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং নিচের খালি ঘরে সেসব ক্ষেত্রের তালিকা লিখি-
|
ছক-৩.৫ : ডিজিটাল মাধ্যমে নাগরিক সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রসমূহ
এটি মনে রাখতে হবে যে কোনো ওয়েবসাইটে তথ্যসমূহ এখন যেমন দেখছি কিছুদিন পর তেমন নাও থাকতে পারে, প্রতিনিয়ত ওয়েবসাইট আপডেট বা সংস্কার হয়। নতুন নতুন সেবা যুক্ত হয়, সেবা প্রদানের কৌশল পরিবর্তন হয়, সেবা প্রদানকারী ব্যক্তির পরিবর্তন হয়। তাই সেগুলোও আমাদের লক্ষ রেখে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সেবা গ্রহণ করতে হবে।
Read more